অফিস ডেস্ক
নিজস্ব প্রতিবেদক,কুষ্টিয়া :
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) কাছে লিখিত অভিযোগও দেওয়া হলেও কুষ্টিয়ায়পদ্মা ও গড়াই নদীর বিশাল বালু অবধৈ ভাবে উত্থোলন করছে একটি প্রভাবশালী মহল ।
অভিযোগেরপরিপ্রেক্ষিতে বিআইডব্লিউটির পক্ষ থেকে কুষ্টিয়ার জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও পুলিশ সুপারকে (এসপি) বালুখোরদের বিরুদ্ধে চিঠি দেওয়া হয়েছে । তাতেও অবৈধচক্রের কর্মকাণ্ড বন্ধ হয়নি।
একটিসুত্রে জানাগেছে সংঘবদ্ধচক্র বিগত ১৭-১৮ বছরধরে কুষ্টিয়া পাবনা ও নাটোর জেলারমধ্য দিয়ে প্রবাহিত পদ্মা নদী ও কুষ্টিয়ার গড়াই নদী থেকে কোটি কোটি কোটিটাকার বালু উত্তোলন করেছে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এই চক্রটি স্থানীয়প্রশাসন পুলিশ ও রাজনৈতিক নেতাদেরছত্রচ্ছায়ায় এই অপকর্ম চালিয়েছে।১০ নভেম্বর বিআইডব্লিউটিএর পক্ষ থেকে কুষ্টিয়া নাটোর ও পাবনার জেলাপ্রশাসক এবং কুষ্টিয়া ও পাবনা জেলারপুলিশ সুপারকে এই বালু উত্তোলনবন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে নির্দেশনা দিয়ে চিঠি পাঠায়। কিন্তু তারপরেও থেমে নেই বালুখেকোদের তৎপরতা।
বিআইডব্লিউটিএর চিঠিতে বলা হয়, বর্তমানে মেসার্স মোল্লা ট্রেডার্স নামের একটি প্রতিষ্ঠান নাটোর জেলার লালপুর উপজেলাধীন পদ্মা নদীর দিয়ার বাহাদুরপুর বালুমহালের বৈধ ইজারাদার। প্রতিষ্ঠানটি ৯ কোটি ৬০লাখ টাকায় ওই বালুমহাল ইজারানিয়েছে। এর বাইরে কুষ্টিয়াপাবনা ও নাটোর জেলায়আর কোনো বৈধ বালু উত্তোলনকারী ইজারাদার নেই। চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, একসময়ের বৈধ ইজারাদার মেসার্স বিশ্বাস এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স শাওন এন্টারপ্রাইজ এবং মেসার্স আনোয়ারুল হক মাসুম নামেরতিনটি প্রতিষ্ঠান যথাসময়ে বালু উত্তোলন করতে সক্ষম হয়নি—এমন দাবি করে দীর্ঘ ১৭-১৮ বছরধরে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে আসছে। এতে সরকার শত শত কোটিটাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এই চক্রটির কারণেবর্তমানে বৈধ ইজারাদার মোল্লা ট্রেডার্স মারাত্মক আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছে।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মেসার্স বিশ্বাস এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স শাওন এন্টারপ্রাইজ ও মেসার্স আনোয়ারুলহক মাসুম নাটোর, কুষ্টিয়া ও পাবনা জেলারমধ্যবর্তী বিস্তীর্ণ পদ্মা নদীর একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করছে। সূত্র জানায়, এসব প্রতিষ্ঠানের নিয়োগ করা লোক ও ক্যাডাররা সশস্ত্রঅবস্থায় দিনরাত নদীতে পাহারায় থাকে। তাদের পাহারায় প্রতিদিন শতাধিক নৌকা ও বাল্কহেড দিয়েবালু উত্তোলন করা হয়। এমন অবস্থায় বৈধ ইজারাদার মেসার্স মোল্লা ট্রেডার্সের প্রোপাইটর শহিদুল ইসলাম বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন।
এর পরিপ্রেক্ষিতে ১০ নভেম্বর বাংলাদেশঅভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন (বিআইডব্লিউটিএ) প্রশাসন ও মানব সম্পদবিভাগের পরিচালক কাজী ওয়াকিল নওয়াজ কুষ্টিয়া, পাবনা ও নাটোরের জেলাপ্রশাসক এবং কুষ্টিয়া ও পাবনা জেলারপুলিশ সুপারকে অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধের নির্দেশনা দিয়ে চিঠি দিয়েছেন।
মেসার্স মোল্লা ট্রেডার্সের প্রোপাইটর শহিদুল ইসলাম বলেন, ঈশ্বরদীর সারাঘাট ও কুষ্টিয়ার হরিপুরসীমান্তে জাকারিয়া পিন্টু ও টনি বিশ্বাসঅবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। কয়েক দিন আগে প্রশাসন উল্টো আমার বৈধ ইজারার টিকিট কাউন্টার ও রান্নাঘর পুড়িয়েদিয়েছে। প্রশাসনের কাছেও হেনস্থার শিকার হচ্ছি। আমার বালুঘাটে যেসব নৌকা আসে, তাদের মারধর করে টাকাপয়সা কেড়ে নিচ্ছে টনি বিশ্বাসের লোক।’
এ বিষয়ে কথা বলতে জাকারিয়া পিন্টু, টনি বিশ্বাসসহ অবৈধ বালু উত্তোলনে জড়িত কারও সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
লক্ষ্মীকুন্ডা নৌ পুলিশের ওসিমো. শফিকুল ইসলাম জানান, ‘এখন আমরা নদীতে টহল দিচ্ছি। আমরা চিঠি পেয়েছি। নদীতে যারা অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে তাদেরকে ডিস্টার্ব করছে আমাদের দেখলেই সব পালিয়ে যায়।’
কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপারমো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘চিঠি তো আগেও আসছে।চিঠিটা আমাকে দেখতে হবে। এগুলো আমাদের যখন আইনশৃঙ্খলা মিটিং হয় সেখানে আলোচনাহয়। এই আলোচনার আলোকেও চিঠিপত্রের আলোকে আমরা কাজ করব।’
কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. আবদুল ওয়াদুদ বলেন, ‘কাউকে বালু উত্তোলনের কোনো অনুমতি দেওয়া হয়নি। বিআইডব্লিউটিএর চিঠিতে সরাসরি বলা হয়েছে, বালু উত্তোলনের পারমিশন কারও নাই। যে বা যারাতুলছে, এটা অবৈধ। আমাদের অভিযান চলবে।’