২২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ নির্বাচন


নিজস্ব প্রতিবেদক : 

 

শিক্ষার্থীদের অধিকার ও গণতান্ত্রিকচর্চা নিশ্চিত করতে আগামী ২২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচন। ছাত্র সংসদ নির্বাচন একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক পরিবেশকে সচল রাখে। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা নেতৃত্ব তৈরি, বিতর্ক এবং জনমত গঠনের সুযোগ পায়। এটি ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক নেতৃত্বের ভিত্তিও তৈরি করে। একটি কার্যকর ছাত্র সংসদ থাকলে ক্যাম্পাসে সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় থাকে এবং বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে শিক্ষার্থীদের নিজস্ব ভূমিকা থাকে। এই নির্বাচন ঘিরে শিক্ষার্থীরা তাদের প্রত্যাশার কথা জানিয়েছেন আমাদের সময়কে। আয়োজনে রাকিবুল ইসলাম

 

জকসু নির্বাচন হতে হবে মুক্ত, সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক

জান্নাতুল ফেরদৌস জেরিন, শিক্ষার্থী, বাংলা বিভাগ

 

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ বা জকসু নির্বাচন শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক। এই নির্বাচন কেবল প্রতিনিধি বেছে নেওয়ার প্রক্রিয়া নয়; বরং এটি শিক্ষার্থীদের স্বার্থ রক্ষা, সমস্যা সমাধান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক পরিবেশ উন্নয়নের এক বিশাল সুযোগ। তাই জকসু নির্বাচন হতে হবে মুক্ত, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক।

প্রথমত, আমরা চাই একটি গণতান্ত্রিক ও স্বচ্ছ নির্বাচন, যেখানে কোনো দলীয় প্রভাব, সহিংসতা কিংবা ভয়ভীতি থাকবে না। প্রতিটি শিক্ষার্থী যাতে অবাধে ভোট দিতে পারে, সেটি নিশ্চিত করতে হবে।

দ্বিতীয়ত, নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থীদের হতে হবে যোগ্য, নীতিবান ও শিক্ষার্থীবান্ধব। তারা যেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের সমস্যা- যেমন হলো সংকট, লাইব্রেরি ও ক্লাসরুম সংকট, পরিবহন সমস্যা, শিক্ষার মানোন্নয়ন ইত্যাদি সমাধানে কাজ করে। তৃতীয়ত, নির্বাচন প্রক্রিয়ায় প্রশাসনের ভূমিকা হতে হবে নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক। কোনো পক্ষপাতিত্ব বা চাপ যেন না থাকে। চতুর্থত, আমরা চাই জকসু হোক শিক্ষার্থীদের প্রকৃত প্ল্যাটফর্ম। এখানে শিক্ষার্থীদের মতামত প্রতিফলিত হবে, ছাত্রকল্যাণমূলক কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে এবং সাংস্কৃতিক-শিক্ষামূলক কার্যক্রমের বিকাশ ঘটানো হবে।

জকসু কেবল প্রয়োজনই নয় বরং সময়ের দাবিও

সোহানুর রহমান, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ

একজন শিক্ষার্থী ঘর থেকে বের হয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রবেশ করল। হঠাৎ পাশ থেকে আরেকজন এসে তাকে জোরে ধাক্কা দিয়ে চলে যেতে লাগল। কেন ধাক্কা দিল এমন প্রশ্ন করতেই সে শিক্ষার্থীর দিকে রুখে দাঁড়িয়ে মারতে উদ্যত হলো। কিছুক্ষণ পর তার সাঙ্গপাঙ্গও সেখানে এসে হাজির হলো। একা ও অসহায় বোধ করে সেই শিক্ষার্থী আর প্রতিবাদ করল না।

কেন সে প্রতিবাদ করল না? কেন সে অসহায় হয়ে দাঁড়িয়ে থাকল? এই নীরবতা বা প্রতিবাদ না করার মূল কারণ হলো বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন কোনো শক্তিশালী প্ল্যাটফর্ম নেই যা সব শিক্ষার্থীর প্রতিনিধিত্ব করবে, তাদের হয়ে কথা বলবে এবং নিরাপত্তার বিষয়ে সোচ্চার থাকবে। মতপ্রকাশের সুযোগ বাড়বে, গণতন্ত্রচর্চা হবে, নেতৃত্বদানের ক্ষমতা বাড়বে এই নির্বাচন দিয়ে। আমাদের ছোট ক্যাম্পাসে সুস্থ-স্বাভাবিক রাজনীতি চর্চার অনন্য মাধ্যম জকসু। আমাদের অধিকার আদায়ের জন্য জকসু নির্বাচনের দাবি বহুদিনের! এ ছাড়া পুরান ঢাকার ছোট এই ক্যাম্পাসে আমাদের প্রতিদিন যে কত সমস্যায় পড়তে হয় তা আমরাই জানি। ঠিক এই কারণেই আমাদের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (জকসু) নির্বাচন অত্যন্ত জরুরি। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা, অধিকার ও শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য জকসু কেবল প্রয়োজনই নয়, বরং সময়ের দাবিও।

জকসু নির্বাচন হবে শিক্ষার্থীর অধিকার ও গণতন্ত্রের চাবিকাঠি

জান্নাতুল ফেরদৌস, শিক্ষার্থী, ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগ

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দাবি স্পষ্ট : ‘জকসু নির্বাচন হবে শিক্ষার্থীর অধিকার ও গণতন্ত্রের চাবিকাঠি।’ এখানে নির্বাচন শুধু একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়- এটি শিক্ষার্থীদের প্রাতিষ্ঠানিক অংশগ্রহণ, জবাবদিহিতা ও মতপ্রকাশের অবিচ্ছেদ্য অংশ হতে হবে। দীর্ঘ ১৯ বছরেও আইন-২০০৫-এ ছাত্র সংসদের বিধান সংযুক্ত না হওয়ায় জকসু নির্বাচন বন্ধ রয়েছে, তবে সদ্য সিন্ডিকেটে প্রণীত খসড়া নীতিমালা এই ব্যবধান ভেদে নতুন সম্ভাবনার পথ খুলেছে। খসড়া অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে (এক্স অফিসিও) সভাপতি হবেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ (এক্স অফিসিও) কোষাধ্যক্ষ মনোনীত হবেন, কিন্তু অন্যান্য পদে সরাসরি ভোটারদের মাধ্যমে নির্বাচনের সুযোগ থাকবে, যা শিক্ষার্থীদের ভোটাধিকার ও প্রতিনিধিত্বকে স্বচ্ছতা দেবে।

এই নির্বাচনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের নিজস্ব প্রতিনিধি বাছাই করতে পারবে, যারা ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সমস্যাগুলো প্রশাসনের কাছে তুলে ধরবে এবং জবাবদিহিতার বিকল্প পথ তৈরি করবে। তবে নির্বাচিত প্রতিনিধিদেরও জবাবদিহিতার মধ্যে রাখতে হবে। আমি মনে করি, নির্বাচন শুধু অধিকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমই নয়, বরং এটি গণতান্ত্রিক সংস্কার এবং শিক্ষার্থীদের মর্যাদা নিশ্চিত করতেও অতি প্রয়োজনীয়। এখন চ্যালেঞ্জ হলো একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করা- যেখানে সব সংগঠন অংশগ্রহণ করবে, ভোটাধিকার সবার জন্য সুরক্ষিত থাকবে এবং প্রশাসনের প্রতি শিক্ষার্থীদের আস্থা পুনঃস্থাপন হবে। এই নির্বাচনের মাধ্যমে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ন্যায্য প্রতিনিধিত্ব পাবে এবং ছাত্র সংস্থা নিজস্ব ধরনে গণতন্ত্রের চর্চায় একটি সেতুবন্ধ গড়ে তুলবে।

দেশের ভবিষ্যৎ যোগ্য নেতা গড়ে তোলার জন্য জকসু নির্বাচন অতীব জরুরি

রেজুয়ানা জান্নাত রিয়া, শিক্ষার্থী, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগ

১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে ভাষাশহীদ রফিকের আত্মত্যাগ থেকে শুরু করে ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে শহীদ সাজিদের আত্মত্যাগ প্রমাণ করে বাংলাদেশের অধিকার আদায়ের প্রায় প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে জগন্নাথের শিক্ষার্থীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো, জগন্নাথের শিক্ষার্থীদের অধিকার তুলে ধরার জন্য কোনো ছাত্র সংসদ নেই। ২০০৫ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হওয়ার সময় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০০৫-এ ছাত্র সংসদের অধ্যাদেশ যুক্ত হয়নি। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ২০ বছরেও প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয় আইনে ছাত্র সংসদ অধ্যাদেশ যুক্ত ও নির্বাচন আয়োজনের উদ্যোগ গ্রহণ করেও সফল হতে পারেনি। তবে সর্বশেষ ২ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৯তম সিন্ডিকেট সভায় ছাত্র সংসদ নির্বাচনের (জকসু) খসড়া নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়। কিন্তু সেটি দ্রুত অধ্যাদেশ আকারে পাস হয়ে আসার কথা থাকলেও সেটা আজও বাস্তবায়ন হয়নি। তাই জকসু নির্বাচন আদৌ হবে কি না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। অন্যদিকে গণতন্ত্র ও রাজনীতি চর্চার অন্যতম একটি মাধ্যম হচ্ছে ছাত্র সংসদ। বর্তমানে যারা দেশের অন্যতম বড় রাজনীতিবিদ তাদের অধিকাংশই ছাত্র জীবনে ছাত্র সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন। যা তাদের পরে দেশের নেতৃত্বদানে সাহায্য করেছে। তাই দেশের ভবিষ্যৎ যোগ্য নেতা গড়ে তোলার জন্য জকসু নির্বাচন অতীব জরুরি।

জকসু কেন দরকার

মো. কায়েস মাহমুদ সৌরভ, শিক্ষার্থী শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট

ক্যাম্পাসে সুষ্ঠু-স্বাভাবিক রাজনীতি চর্চারও অদ্বিতীয় মাধ্যম এই জকসু। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ (জকসু)। ছাত্রদের অধিকার আদায়ের জন্য দফায় দফায় রাস্তায় নামতে হচ্ছে। ১৬, ১৮ এবং এই ২৪-এ এসেও শিক্ষার্থীরা তাদের অধিকারের জন্য রাস্তায় রক্ত দিচ্ছে, কিন্তু প্রশাসনের কোনোরকম দায়বদ্ধতা দৃষ্টিগোচর হচ্ছে না। স্বৈরাচার সরকারের পতনের পর আমরা ভেবেছিলাম আমাদের ক্যাম্পাসের কাজ দুর্নীতিমুক্ত হবে, আন্দোলন হয়ে গিয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের ঠেলাগাড়ি। আমরা সেই ঠেলাগাড়ি ঠেলে ঠেলে ক্লান্ত। আর কত? বারবার শিক্ষার্থীদের রাস্তায় না নামিয়ে আমাদের যদি জকসু থাকে, ছাত্রনেতা থাকে, তারা শিক্ষার্থীদের হয়ে প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করবে, ছাত্রদের অধিকার নিশ্চিত করবে, প্রশাসনকে জবাবদিহিতার আওতায় আনবে। আমাদের যদি জকসু হতো তাহলে আমাদের এত রক্ত দেওয়া লাগত না, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেড, রাবার বুলেট, পানি কামান নিক্ষেপ করা হতো না, লাঠিচার্জ করা হতো না। ক্যাম্পাসগুলোতে ছাত্রদের অধিকার নিশ্চিত হয় ছাত্র সংসদের মাধ্যমে, তাই আমরা আমাদের অধিকার নিশ্চিত করতে অতিদ্রুত জকসু নির্বাচন চাই।


Email: bijoynews24bd@gmail.com

প্রকাশকঃ রোকমুনুর জামান রনি

সম্পাদকঃ শামসুল আলম স্বপন

ফোনঃ 01716954919 / 01722158130

যোগাযোগঃ A-231 Housing Estate, Kushtia-7000.

© Jonotar Potrika ২০২৫ সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত

সতর্কতাঃ অনুমতি ব্যতীত কোন সংবাদ বা ছবি প্রকাশ বা ব্যবহার করা যাবে না।